জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় বন্ধুর পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় পলাশ (১৫) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের রুদ্র বয়ড়া গ্রামে রবিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পোগলদিঘা ইউনিয়নের তারাকান্দি কান্দারপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে নিহত পলাশ স্থানীয় পোগলদিঘা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পলাশকে নির্যাতনকারী সাগরের দাদি রওশনারাকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে পলাশের বন্ধু ফাহিমের ছোট ভাইয়ের জেএসসি পাশের প্রশংসাপত্র তুলে দেওয়ার জন্য ২ হাজার টাকা নেন আরেক বন্ধু সাগর। সাগর প্রশংসাপত্র দিতে না পারার কারণে তাদের মধ্যে এ নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পলাশ উপজেলার আওনা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে আব্দুস ছালাম নামের একজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যান। এ সময় সাগর পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে মোবাইলে ফোন করে ফাহিমকে রুদ্র বয়ড়ায় সাগরদের বাড়িতে যেতে বলেন।
পরে রাতে ফাহিম ও পলাশসহ কয়েকজন বন্ধু মিলে টাকা নেওয়ার জন্য সাগরদের বাড়িতে যান। এ সময় সাগরের পরিবারের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাগর ও তার বাবা আব্দুর রশিদ পলাশদের ওপর হামলা চালান। তারা পলাশকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। তারাই গুরুতর আহত পলাশকে লেপ দিয়ে পেঁচিয়ে স্থানীয় অটোরিকশাভ্যান চালক আলীকে দিয়ে রুদ্রবয়ড়া এলাকার আব্দুল্লাহ মোড়ে রেখে আসতে বলেন।
এ সময় পলাশের বন্ধুরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তার অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাতেই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। রাত ৩টার দিকে পলাশ সেখানে মারা যায়।
এদিকে ঘটনার রাত থেকেই হামলাকারী আব্দুর রশিদ ও তার ছেলে সাগরসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। স্থানীয় তারাকান্দি তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনার রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাগরের দাদি রওশনারাকে আটক করেছে। নিহত পলাশের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আজ সোমবার বিকেলে সরিষাবাড়ীতে তাদের বাড়িতে নেয়া হয়।
নিহত পলাশের বাবা সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘পলাশ পোগলদিঘা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র। আসছে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার। পলাশের বন্ধু ফাহিমের ছোট ভাইয়ের জন্য স্কুল থেকে জেএসসির প্রশংসাপত্র তুলে দেওয়ার কথা বলে সাগর দুই হাজার টাকা নিয়েছিল। প্রশংসাপত্র না তুলে সে টাকাগুলো খরচ করে ফেলে। টাকা ফেরৎ দেওয়ার কথা বলে পরিকল্পিতভাবে সাগর ও তার বাবা আব্দুর রশিদ বাড়িতে ডেকে নিয়ে পলাশকে হত্যা করেছে। আমার ছেলের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।’
তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মোহব্বত কবীর বলেন, ‘পলাশকে কুপিয়ে আহত করার পর থেকেই আব্দুর রশিদ ও তার ছেলে সাগরসহ পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদেরকে আটক করার চেষ্টা চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্যাতনকারী সাগরের দাদি রওশনারাকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’